সোমবার, ১৫ই জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩১শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

বাংলা সাহিত্যে মুহররম ও কারবালা

পোস্ট হয়েছে: আগস্ট ২৭, ২০২০ 

news-image

আমিন আল আসাদ   

ভূমিকা : মুহররম তরবারির ওপর রক্তের বিজয়ের মাস। দশই মুহররম কারবালার মরুপ্রান্তরে সংঘটিত বিয়োগান্ত ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে এক ট্র্যাজেডি। এ এক হৃদয়বিদারক ও শোকাবহ ঘটনা। কেবল শোকাবহ ঘটনাই নয়, বরং এর শোক থেকে উত্থিত শক্তি ভস্মীভূত করে দেয় সকল প্রকার যালিমের লৌহ লকার। কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনায় শোককাতর হয় না এমন মুসলমান নেই বললেই চলে। দল-মত, দেশ-ভাষা, বর্ণ, গোত্র, মাযহাব, তরিকা নির্বিশেষে সকল ঈমানদার মুসলমান- যাদের হৃদয়ে আল্লাহর রাসূল (সা.) ও তাঁর আহলে বাইতের প্রতি বিন্দুমাত্র ভালোবাসা রয়েছে, তারা কারবালা প্রান্তরে ঘৃণিত ইয়াযীদ বাহিনীর কাপুরুষোচিত হামলায় নবীর নাতি, বেহেশতে যুবকদের সরদার ইমাম হোসাইন (আ.) এবং তাঁর ৭২ জন সঙ্গী-সাথিসহ নির্মমভাবে শাহাদাত বরণের করুণ ঘটনায় বেদনাহত হয়। শুধু মুসলমানরাই নয়, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বিবেকবান অমুসলিম পণ্ডিতরাও লিখেছেন অমূল্য সব শোকবাণী। এদের মধ্যে রয়েছেন ভারতবর্ষের প্রখ্যাত নেতা মহাত্মা গান্ধী, ইংরেজ দার্শনিক ও লেখক টমাস কার্লাইল, ইংরেজ ওপন্যাসিক চার্লস ডিকেন্স, এডওয়ার্ড ব্রাউন, টমাস মাসরিক, ইতিহাসবিদ পি কে হিট্টি, ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টার, ফ্রেডরিক জেমস, দার্শনিক নিকলসন, জার্মান প্রাচ্যবিদ মরবিন, জার্মানির বিখ্যাত কবি গ্যাটে, খ্রিস্টান পুরোহিত অ্যান্টন বারা প্রমুখ।
কারবালার মর্মান্তিক ঘটনায় তাঁরা মর্মাহত হন। কেবল ইমাম হোসাইন (আ.)-এর কালজয়ী বিপ্লবের প্রতিপক্ষ তদানিন্তন ধিকৃত বর্বর ইয়াযীদ ইবনে মুয়াবিয়া, ইবনে যিয়াদ ও সীমার প্রমুখ মানবতাবিরোধী অপরাধী ও তাদের প্রতিষ্ঠিত রাজবংশীয় স্বৈরশাসকবর্গ এবং তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শের বর্তমান প্রজন্মরা ব্যতীত। সেজন্যই কবি শোকগাথায় গেয়ে উঠেছেন- ‘অমর শহীদ ইমাম হোসেন জন্মেছিলেন মদীনায়/ তাঁর শোকে জগৎ কাঁদে, কাঁদে না যালিমেরাই।’ আশুরার চেতনা ও আন্দোলন মানবতার ইতিহাসে অতীব গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়।
সাহিত্যে কারবালার প্রভাব
ইমাম হোসাইন শুধু একটি নাম নয়। একটি ইতিহাস, একটি চেতনার নাম- যা সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য নিরুপণকারী। কালজয়ী বীর ইমাম হোসাইন ন্যায় ও ইনসাফের পক্ষে এবং অন্যায়, যুলুম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিপক্ষে অকুতভয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক মহানায়ক। সত্যান্বেষীদের মন-মগজ জুড়ে থাকা কালোত্তীর্ণ এক অমর ব্যক্তিত্ব। কারবালার শোকাবহ ঘটনা ও আশুরা আন্দোলনের তাৎপর্য নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় বই-পুস্তক লেখা হয়েছে। তবে উর্দু-ফারসি ভাষায়ই এর চর্চা হয়েছে ব্যাপক। হিন্দি ভাষায়ও তা চর্চা হয়েছে। আমাদের মাতৃভাষা বাংলায়ও কম নয়; বরং অনেক।
বাংলা ভাষায় আশুরার শোকাবহ ঘটনা, মুহররমের চেতনা, ইমাম হোসাইন (আ.)-এর সংগ্রামের দর্শন নিয়ে একদিকে যেমন রচিত হয়েছে তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, সেই সাথে কারবালার শোকাবহ ঘটনা ও আশুরা আন্দোলনের আবেগঘন বিষয়ে রচিত হয়েছে মর্সিয়া সাহিত্যের বিশাল ভাণ্ডার। এসবের মধ্যে রয়েছে কবিতা, ছড়া, গান, জারি, মর্সিয়া, এপিক, কথিকা, নাটিকা, উপাখ্যান, পুঁথিসাহিত্য ইত্যাদি। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অত্যন্ত মর্মস্পর্শী সাহিত্য হিসেবে পরিগণিত হয়ে হয়ে আছে মর্সিয়া সাহিত্য। তাই বাংলা সাহিত্যে কারবালার চেতনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। 
মর্সিয়া সাহিত্যের বিকাশ ও কিছু কথা
উপমহাদেশে মর্সিয়া সাহিত্যের বিকাশ ঘটে মোঘল আমল থেকেই। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নবাব আলীবর্দী খান ও তদীয় দৌহিত্র নবাব সিরাজউদ্দৌলার সময়ে মুর্শিদাবাদে যে কবিদের সমাগম হয়েছিল তাঁদের অনেকেই ছিলেন শিয়া অথবা নবীবংশের প্রতি মুহব্বত পোষণকারী সুন্নি- যাঁদেরকে বলা হয় আহলে বাইতপন্থী সুন্নি। তাঁরা তরিকতপন্থীও বটে। তাঁদেরই প্রভাবে বাংলা মূলুকে মর্সিয়া সাহিত্যের অনুপ্রবেশ ঘটে এবং সেটা পুঁথি সাহিত্যকে প্রভাবিত করে। ফারসি-উর্দু ভাষার ধর্মীয় বোধ থেকেই বহু বাঙালি মুসলিম কবি মর্সিয়া ও পুঁথি রচনা করেন। তাঁদের মধ্যে রাধারমণ নামে একজন হিন্দু কবিও রয়েছেন।
কারবালা ও মুহররমের ঘটনা নিয়ে মধ্যযুগে ও পরবর্তীকালে যে সব পুঁথি ও বই লেখা হয়েছে সেগুলোর নাম ‘জঙ্গনামা’, ‘মকতুল হুসায়েন’, ‘শহীদ-ই-কারবালা’, ‘সংগ্রাম হুসেন’, ‘এমাম এ্যনের কিচ্ছা’, ‘শাহাদাত নামা’, ‘হানিফার লড়াই’, ‘বড় জঙ্গনামা’, ‘গুলজার-ই-শাহাদাত’, ‘দাস্তানে শহীদ ইকরামালী’, ‘জঙ্গে কারবালা’ ইত্যাদি। পল্লি বাংলার মানুষ কারবালার ঘটনা নিয়ে মুহররম মাসে যে বিষাদময় গীতিকা গেয়ে থাকে তার নাম জারিগান। জারিগান মূলত আশুরার শোকগাথাকে নিয়েই রচিত হয়েছে। তাই বলা যায় জারিগান মুহররমের বেদনাগাথার এক বিশেষ রূপ।
মধ্যযুগের কবিদের থেকে শুরু করে পরবর্তীকালে আবুল মা-আলী, মুহাম্মদ হামিদ আলী, কায়কোবাদ, ইসমাইল হোসেন সিরাজী, মীর রহমত আলী, কাজী নজরুল ইসলাম, ফররুখ আহমদ পর্যন্ত আশুরা বা কারবালাকেন্দ্রিক কাব্যচর্চা এক বিশেষ রূপ প্রাপ্ত হয়। কারবালা ট্র্যাজেডি নিয়ে বাংলা ভাষায় কে সর্বপ্রথম লিখেছেন তার সঠিক ইতিহাস খুঁজে না পাওয়া গেলেও একথা বলা যায়, আহমদ নগরের কবি আশরাফ প্রথমবারের মতো মর্সিয়া লিখেছিলেন। শায়খ ফয়জুল্লাহ কারবালা সম্বন্ধে ‘জয়গুনে চৌতিশা’ নামে একটি কবিতা রচনা করেন যা এ সম্পর্কিত প্রথম বাংলা কবিতা বলে গণ্য করা হয়। বাহরাম খান নামে এক কবি লিখেন ‘মাকতাল হোসেন’। আরো লিখেন মুহাম্মদ খান নামে আরেক কবি। কারবালা নিয়ে আরো যেসব কবিতা রচিত হয় সেগুলো হলো কবি হায়াত মামুদের ‘কাশেমের লড়াই’, কবি হামিদের ‘সংগ্রাম হুসায়েন’, ফকির গরীবুল্লাহর ‘জঙ্গনামা’, কবি রাধারমণ-এর ‘এমাম এনার কিচ্ছা’, কবি মোহাম্মদ হামিদুল্লাহর ‘গুলজার-ই-শাহাদাত’, কবি মুহাম্মদ হামিদ আলীর ‘জয়নাল উদ্ধার’ ও ‘কাশেম বধ’, কবি মতিউর রহমান খান-এর ‘এজিদ বধ’ (যা অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত), কবি কায়কোবাদের ‘মহররম শহীদ’ (যা তিন খণ্ডে সমাপ্ত), কবি আবদুল বারীর ‘কারবালা’, ইসমাইল হোসেন সিরাজীর ‘মহাশিখা’, কবি আবদুল মুনায়েমের ‘পঞ্চশহীদ’, কবি মোহাম্মদ ইসমাইলের ‘শহীদের খুন’, কবি আবদুল হাকিমের ‘মরুসেনা’, মীর রহমাত আলীর ‘মর্হরম কাব্য’ ইত্যাদি।
কারবালাকেন্দ্রিক কিছু কবিতার উদ্বৃতি
কারবালাকেন্দ্রিক মর্মস্পর্শী কবিতার কিছু লাইন এখানে উল্লেখযোগ্য। ফকির গরীবুল্লাহর ‘জঙ্গনামা’র দু’একটি লাইন এমন-
‘হোসেন বলেন বিবি কান্দিও না আর
আমা বাদে ভালো হবে তোমা সবাকার
শহর বানু বলে কি যে হবে আর
না রাখিলে মোর বংশ এজিদে কুফ্ফার
আপনি চলিলা ফের করিতে লড়াই
কুফরে সুপিয়া যাও কি হবে ভালাই
এমাম বলেন বিবি না কান্দিও আর
রদ না হইবে কভু কলম আল্লার
ঘিরিয়া রাখিল কুফার পানি বন্ধ করে
পানি পানি করে যত সব গেলো মরে
তোমরা মরিছ সবে পানির লাগিয়া
মেরাও জিও পানি বিনে যায় নেকালিয়া
আজ কাল-ই পানি বিনে মরিব নিশ্চয়
লড়িয়া মরিলে নাম রবে দুনিয়ায়।’
কবি কায়কোবাদ লিখেন,
‘এই কি কারবালা সেই! এই সেই স্থান!
এই সেই মহামরু হেরিলে যাহারে
অশ্রু ঝরে দু’নয়নে কেঁদে ওঠে প্রাণ
যত কথা মনে পড়ে শিরায় শিরায়
প্রচণ্ড অনল শ্রোত হয় প্রবাহিত 
প্রাণের নিভৃত কক্ষে হৃদয় কন্দরে
কি যে এক শোক স্মৃতি হয় উচ্ছ্বসিত
এই কি কারবালা সেই এই কি শ্মশান
যাহার বালুকা রাশি সিন্দুরের মতো-
হয়েছিলো সুরঞ্জিত হোসেন-শোণিতে।’
কবি শাহাদাত হোসেন লিখেন,
‘এই সেই মহররম সেদিনের সেই গম
ভুলেছো কি মুসলিম? দ্বীন তব ইসলাম।’
তিনি আরো লিখেন,
‘রুদ্র দুপুর চলে আফতাব শিরে গলে
ছুটে জ্বালা চৌদিকে ইঙ্গিত মৃত্যুর
কোনখানে নাহি চিন পানি এক বিন্দুর
মরু বালু ঝলকায়
উন্মনা ছুটে চলে বাতাসের হল্কায়
নাই পানি, নাই ছায়া জ্বল জ্বল মরুকায়া
কারবালা প্রান্তর ঝাঁ ঝাঁ করে চৌদিক
শান্তির রেখা নাই সান্ত¡না মৌখিক
হাহাকার! হাহাকার!!
আজ বুঝি দুনিয়ায় জাগিয়াছে মহামার
লাও পানি জান যায় ছাতি কাঁপে পাঞ্জায়
কাতরায় পানি বিনে আজি তারা শাহারায়
কলিজার টুকরা সে সন্তান একপাশে
জবে করা কবুতর ছটফটি মরে হায়
ফাটে শোকে মার প্রাণ দাও পানি ছেলে যায়
দিল বুকে জনকের
ফিরো এলো কোলে শিশু বুকে তীর জহরের…’
সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী লিখেন,
‘দুরাত্মা শিমর পাপী সহসা যাইয়া
বসিলেক বক্ষে চাপি নয়ন উন্মীলি
হেরিলা রাজর্ষি বর নির্ম্মম মুরতি
শিমর বসেছে বক্ষে শিরচ্ছেদ তরে 
কাতরে কহিলা বীর ‘ওরে রে শিমর
আজী পুণ্য জুম্মাবার মধ্যাহ্ন নামাজ
পরিবার অবসর দে রে কিছুক্ষণ।’
পাপিষ্ঠ শিমার যখন ইমাম হোসাইন (আ.)-এর শির কর্তন করল তখন কী পরিবেশ সৃষ্টি হলো মুহূর্তে ধরায় সেটা বর্ণনা দিচ্ছেন কবি এভাবে-
‘খণ্ডিত হইলো শির! কাঁপিল ধরনী 
সহসা জলদ জালে লুকালো তপন
আঁধার হইলো বিশ্ব বিভু সিংহাসন
কাঁপিলেক থর থর নিদারুণ শোকে
প্রকৃতি ছাড়িল শ্বাস, উড়ি রাজোরাশি
আঁধারিল দশ দিশি গগন মণ্ডলে
সহস্র সহস্র উল্কা জ্বলিয়া উঠিল
রহিল প্রবল বেগে উজানে ফোরাত
বিপ্লবিয়া বেলাভূমি কল্লোলে সমূদ্র
গর্জিল ভীষণ স্বাসে বিষম বিষাদে।’
মুহররম ও কারবালা সংক্রান্ত কাব্য রচনায় আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। কবি আবদুল হাই শিকদার সম্পাদিত, নজরুল ইনিস্টিটিউট থেকে প্রকাশিত ‘নজরুল কাব্যে আশুরা ও মুহাররম’ শীর্ষক গ্রন্থে নজরুলের মর্সিয়াগুলো একত্রে সংকলিত হয়েছে।
জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের ‘মহররম’ কবিতাটি জাতীয় জাগরণের কবিতা রূপে পঠিত হয়ে থাকে। যা নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কাব্যগ্রন্থে স্থান পেয়েছে।
‘নীল সিয়া আসমান লালে লাল দুনিয়া
আম্মা লাল তেরি খুন কিয়া খুনিয়া
কাঁদে কোন ক্রন্দসী কারবালা ফোরাতে
সেকাঁদনে আসু আনে সীমারের ছোড়াতে
রুদ্র-মাতম উঠে দুুনিয়া দামেশকে
জয়নালে পড়ালো এ খুনিয়ারা বেশ কে?
তবে শোন ঐ শোন বাজে কোথা দামামা
শমসের হাতে নাও বাঁধো শিরে আমামা
বেজেছে নাকাড়া হাঁকে নকীবের তূর্য্য
হুশিয়ার ইসলাম ডুবে তব সূর্য।’
‘মহররম’ কবিতায় আরো দুটি লাইন আছে তাৎপর্যপূর্ণ-
‘ফিরে এলো আবার ঐ মহররম মাহিনা
ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহিনা।’
প্রশ্ন জাগতে পারে যে, নজরুল কি তাহলে আহলে বাইতের শোকে কিংবা আহলে বাইতের মুহব্বতে কোন মর্সিয়া, কোন শোকানুষ্ঠান বা ক্রন্দন চান না? তিনি কি ইমাম হোসাইনের শাহাদাতের শোকে বেদনাকাতর নন? পৃথিবীতে কত লোক মারা গিয়েছে এবং মারা যায়। তাদেরকে তো মানুষ একসময় ভুলেই যায়। একদিন দুদিন তাদের জন্য কাঁদে। হয়তো কালে-ভদ্রে বা বছরে একদিন স্মরণসভা হয়। কিন্তু আহলে বাইতের শোকে কারবালার শহীদানদের শোকে যুগ যুগ ধরে মানুষের অশ্রু ঝরছে। শোকার্তের কান্নার ভেতর দিয়ে শহীদানে কারবালা বেঁচে আছেন, জেগে আছে কারবালার চেতনা। নজরুল কি এ বিষয়ে অবগত নন?
না, বন্ধু! না। কোন কোন কবিতার কোন কোন বাক্য বা শব্দাবলি জ্ঞাত অর্থের চেয়ে বা বাহ্যিক অর্থের চেয়েও অতিরিক্ত অর্থ প্রকাশ করে। বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ তাই বলেন : ‘কবিতার শব্দমালা জ্ঞাত অর্থের চেয়েও অধিক বা অতিরিক্ত অর্থ প্রকাশ করে।’ তাই নজরুলের কবিতার উক্ত দুটি লাইনের বাহ্যিক অর্থের চেয়ে অন্তর্নিহিত অর্থের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়া দরকার। নজরুল উক্ত দুটি লাইনের মাধ্যমে চাচ্ছেন শোককে শক্তিতে পরিণত করতে। তবেই জাতির আজাদি আসবে। নজরুলের ‘মহররম’ কবিতাটির কাল হচ্ছে পরাধীন বাংলার সময়কাল। যখন ব্রিটিশ ইংরেজ বেনিয়াদের বিরুদ্ধে জাতি নানাভাবে মুক্তির সংগ্রামে লিপ্ত। ‘মহররম’ কবিতাটির মাধ্যমে নজরুল বাংলার মুসলমানদেরকে জাগাতে চেয়েছেন শোককে শক্তিতে পরিণত করে। যেমনিভাবে শোককে শক্তিতে পরিণত করে সারা বিশ্বের যাবতীয় বিরোধী শক্তির সম্মিলিত ষড়যন্ত্র, রুদ্রচক্ষু ও বিরোধিতার পরও নবীবংশীয় সাইয়্যেদের নেতৃত্বের নিপুণতায় আত্মশক্তিতে দ-ায়মান বর্তমান ইরান। নজরুলও তাঁর জাতির জন্য তেমনটিই চেয়েছিলেন।
আসলে নজরুল তাঁর উক্ত লাইন দুটি দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন কেবল শোক নয়, আশুরা আন্দোলনের চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে সত্য-ন্যায়ের বিজয় ঘটাতে হবে। যে নজরুল লিখেছেন, ‘ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহিনা’, সেই নজরুল-ই আবার লিখেছেন মর্মস্পর্শী সব মর্সিয়া।
‘মোহররমের চাঁদ এলো ঐ কাঁদাতে ফের দুনিয়ায়
ওয়া হোসেনা ওয়া হোসেনা তারি মাতম শোনা যায়।’
তিনি লিখেছেন,
‘এলো শোকের সেই মোহররম
কারবালা স্মৃতি বুকে লয়ে
আজি বেতাব বিশ্ব মুসলিম
সেই শোকে রয়ে রয়ে।’
আরো লিখেছেন,
‘ফোরাতের পানিতে নেমে ফাতেমা দুলাল কাঁদে অঝোর নয়নে রে
দুহাতে তুলিয়া পানি ফেলিয়া দিলেন অমনি পড়িল কি মনেরে।’

‘অসীম বেদনায় কাঁদে মদিনাবাসী
নিভিয়া গেল চাঁদের মুখের হাসি
কান্দে তরুলতা বনের পাখি
কোথায় হোসেন ডাকি ডাকি
পড়ছে ঝরে তারার রাশি।’
আরেকটি কবিতার লাইন এ রকম-
‘হায় হোসেন হায় হোসেন বলি
কাঁদে গিরিদরী মরু বনস্থলী
কাঁদে পশু ও পাখি তরুলতার সনে
তারি মর্সিয়া গাহে
বিশ্ব যাবে মুছে। মুছিবে না আসু
চিরকাল কাঁদিবে কালের নয়নে।’
এটাতো আহলে বাইতের বর্ণিত রেওয়ায়াতেরই মর্মার্থ- ‘আমাদের অনুসারীরা যুগ যুগ ধরে আমাদের জন্য কাঁদবে।’
নজরুল আরো লিখেন,
‘ওগো মা ফাতেমা
ছুটে আয়…. ছুটে আয়…
তোর দুলালের বুকে হানে ছুরি
দ্বীনের শেষ বাতি বুঝি নিভিয়া যায় গো
বুঝি আঁধার হলো মদিনাপুরী।’
‘মহররম’ নামে নজরুলের আরো একটি কবি আছে। সেখানে তিনি লিখেছেন,
‘ওরে বাংলার মুসলিম তোরা কাঁদ
এসেছে এজিদী বিদ্বেষ পূনঃ মোহরমের চাঁদ
এক ধর্ম এক জাতি তবু ক্ষুধিত সর্বনেশে
তখতের লোভে এসেছে এজিদ কমবখতের বেশে
এসেছে সীমার এসছে ‘কুফার’ বিশ্বাসঘাতকতা
ত্যাগের ধর্মে এনেছে লোভের প্রবল নির্মমতা
মুসলিমে মুসলিমে আনিয়াছে বিদ্বেষের বিষাদ
কাঁদে আসমান জমিন কাঁদিছে মহররমের চাঁদ
একদিকে মাতা ফাতেমার বীর দুলাল হোসেনী সেনা
আরদিকে যত তখত বিলাসী লোভী এজিদের কেনা
মাঝে বহিতেছে শান্তিপ্রবাহ পূর্ণ ফোরাত নদী
শান্তিবারিতে তৃষাতুর মোরা ওরা থাকে তাহা রোধি
একদিকে নবী পরিবার ওরা কেবলি শান্তিব্রতী
আর একদিকে স্বার্থান্বেষী হিংসুক ক্রোধমতি
এই দুনিয়ার মৃত্তিকা ছিলো তখত যে খলিফার
ভেঙে দিয়েছিলো স্বর্ণসিংহানের যে অধিকার
মদগর্ব্বী ও ভোগী বর্বর এজিদী ধর্ম্মী যত
যুগে যুগে সেই সাম্য ধর্মে করিতে চেয়েছে হত
এই ধূর্ত ও ভোগীরাই তলোয়ারে বেঁধে কোরআন
আলীর সেনারে করেছে সদাই বিব্রত পেরেশান
এই এজিদেও সেনাদল শয়তানের প্ররোচনায়
হাসান হোসেনে গালি দিতে যেতো মক্কা ও মদিনায়
এরাই আত্ম প্রতিষ্ঠা লোভে মসজিদে মসজিদে
বক্তৃতা দিয়ে জাগাত ঈর্ষা হায় স্বজাতির হৃদে
ঐক্য যে ইসলামের লক্ষ্য এরা তাহা দেয় ভেঙে
ফোরাত নদীর কুল যুগে যুগে রক্তে উঠেছে রেঙে-
এই ভোগীদের জুলুমে। ইহারা এজীদী মুসলমান
এরা ইসলামী সাম্যবাদের করিয়াছে খান খান
এক বিন্দুও প্রেম অমৃত নাই ইহাদের বুকে
শিশু আজগরে তীর হেনে হাসে পিশাচের মত সুখে
সার্বজনিন ভ্রাতৃত্ব ইসলামের সাম্যবাদ
যুগে যুগে এই অসুর সেনারা করিয়াছে বরবাদ।’
কবি মনিরউদ্দীন ইউসুফ লিখেছেন,
‘না আমি বিদ্রোহী নই
যুদ্ধ করতে আসিনি আমি
দেখনা আমার কোন সৈন্য নেই, দুর্গ নেই, অস্ত্রাগার নেই
আমার সঙ্গে আমার স্ত্রী-পুত্র-কন্যা
আছে ভাই বেরাদও ও কয়েকজন একনিষ্ঠ অনুগামী বন্ধু
আমি কারবালা পর্যন্ত এগিয়ে এসেছি একটি দায়িত্ববোধের শুভ তাড়নায়
আমার মাতামহ আল্লার রাসুল (সা), শেষনবী
তিনি প্রাচীন যুগের নবুয়তের শেষ ব্যাক্তি
তাঁর পড়ে আর কোন নবী আসবেনা
তিনি আধুনিক যুগে আল্লাহ প্রেরিত নকীব
আামি কারবালায় যিহাদের পতকা উড্ডীন করে গেলাম
শাহাদাতের এ ঐতিহ্য আমাদের থেকেই ছড়িয়ে পড়বে
অনাগত যুগ যুগান্ত ধরে সব দেশে
মনে রেখো আমি যুদ্ধ করতে আসিনি
আমার কোন সৈন্য নেই, দুর্গ নেই, অস্ত্রাগার নেই
আমি প্রতিবাদ করতে এসেছি এবং শাহাদাতের ঝা-া উঁচু করে রেখে গোলাম।’
ইসলামি রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমদ লিখেছেন,
‘ফোরাতের তীরে তীরে কাঁদে আজো সংখ্যাতীত প্রাণ
উদভ্রান্ত ঘূর্ণির মতো শান্তি চায় মাতমে কান্নায়
যেখানে মৃত্যুর মুখে তৃষ্ণাতপ্ত মরুর হাওয়ায়
জিগরের খুন দিলো কারবালার বীর শহীদান
স্মৃতির পাথর পটে সে কাহিনী রয়েছে অম্লান
উজ্জ্বল রক্তের রঙে, মোছেনি তা মরু শাহারায়।’
এভাবে আশুরা ও মুহররমের প্রেক্ষাপটে অনেকেই লিখেছেন। এখনো তা চলমান আছে। বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্তভাবে। বিশ শতকের পঞ্চাশ, ষাট, সত্তর, আশি ও নব্বই দশকের কবিরা অনেকেই আশুরা ও মুহররম নিয়ে কবিতা ও গান লিখেছেন। মর্সিয়া লিখেছেন ও লিখছেন অথবা আশুরা, মোহররম, ইমাম হোসাইন, ফোরাত, কারবালা প্রান্তর, কে হোসাইন-কে ইয়াযীদ, ঘৃণিত সীমার ইত্যাদি মুহররম সম্পর্কিত শব্দাবলিকে উপমা-উৎপ্রেক্ষাতে হলেও বিভিন্ন কবিতার বিভিন্ন লাইন প্রসঙ্গে টেনে এনেছেন। কারবালা সংক্রান্ত স্বতন্ত্র কবিতার রচনা অথবা উপমা-উৎপ্রেক্ষায় মুহররমকেন্দ্রিক শব্দাবলিকে টেনে আনা এই সব কবির তালিকায় রয়েছেন সৈয়দ আলী আহসান, আল মাহমুদ, শামসুর রাহমান, কআবদুস সাত্তার, আল মুজাহিদী, আসাদ চৌধুরী, শাহাদাত হোসাইন, মাওলানা রুহুল আমিন খান, ফজল শাহাবুদ্দিন, মোহাম্মদ নূরুল হুদা, আ স ম বাবর আলী, মসউদ উশ শহীদ, জহুরুশ শহীদ, আবু নসরত রহমত উল্লাহ, ফারুক মাহমুদ, মতিউর রহমান মল্লিক, আবদুল হাই শিকদার, গোলাম মোহাম্মদ, কবি আসাদ বিন হাফিজ, হোসেন মাহমুদ, মোহসিন হোসাইন, সৈয়দ মুসা রেজা, অধ্যাপক সিরাজুল হক, সোলায়মান আহসান, মুকুল চৌধুরী, আবদুল মুকিত চৌধুরী, মহিউদ্দিন আকবর, আতিক হেলাল, মানসুর মুজাম্মিল প্রমুখ। আমার নিজেরও একটি ছড়া-কবিতা আছে মুহাররমম নিয়ে-
‘আকাশে ওই উঠলো দেখো মোহররমের চাঁদ
ইমাম হোসেনের শোকেতে কাঁদরে তোরা কাঁদ
এই চাদেরি দশ তারিখে ফোরাত নদীর তীরে
কারবালা মাঠ লাল হয়েছে রক্তেরি আবিরে
এজিদ সীমার পাষ-রা ছুড়লো যখন তীর
সেই তীরেতে জীবন দিলেন আল্লাহপ্রেমিক বীর
ইমাম এবং তাঁর সাথিরা জীবন দিলেন হেসে
সত্য পথে লড়াই করে দ্বীনকে ভালবেসে
এজিদ সীমার পাষ-রা আজো লেগেই আছে
বীর মুজাহিদ ইমাম হোসেনের সাথিদের পাছে
ইমাম হোসেনের সাথিরা আজো বিশ্বমাঝে
করছে লড়াই ঢালছে লহু সকাল দুপুর সাঁঝে।’
চলমান সময়েও চোখে পড়ে মুহররমের কবিতা। সকল প্রতিবন্ধকতা, অপপ্রচার এবং নিরুৎসাহিতকরণের জন্য ভ্রান্ত ফতোয়াবাজীর পরও মানুষের হৃদয় থেকে কারবালাকে মুছে দিতে পারে নি এজিদের পক্ষশক্তি ও মানসপুত্ররা। আজো মর্সিয়া রচনা করে চলেছেন অনেক কবি। এদের মধ্যে রয়েছেন মোহাম্মদ আতিয়ার রহমান, ইরফানুল হক, শাহনেওয়াজ তাবীব, নাজীম হোসাইন এবং নুরুল মনির প্রমুখ।
উপসংহার
কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার পর সেদিন নবী পরিবারের সদস্যদের ওপর যে অত্যাচার করা হয়েছিল এবং পরবর্তী সময়ে উমাইয়্যা ও আব্বাসী যালিম শাসকদের আমলে নবীবংশের অনুসারীদের ওপর যে অত্যাচার ও নির্মূল অভিযান চালানো হয়েছিল তা আজও বিদ্যমান। উমাইয়্যা ও আব্বাসী যালিম শাসকদের হাতে পরবর্তীকালে বড় বড় আলেম ও সূফিসাধক নিহত হয়েছিলেন। শহীদ হয়েছিলেন নবী বংশের পরবর্তী ইমামগণ।
সম্প্রতি নানা পুস্তক-পুস্তিকায় একদল চরমপন্থী এই মর্মে ফতোয়াবাজি করছে যে, কারবালার ঘটনা নিয়ে কবিতা, প্রবন্ধ, মর্সিয়া, লেখা যাবে না। কারবালার ইতিহাস চর্চা করা যাবে না। তা নাকি বেদাত। অথচ এই কারবালাই ইসলামকে জিন্দা করেছে। ইসলামকে রক্ষা করেছে। চিনতে সহযোগিতা করেছে কে ইয়াযিদের অনুসারী আর কে হোসাইনের অনুসারী। ইসলামের ইতিহাসে হুদাইবিয়ার সন্ধি যেমন ‘ফাতহুম মুবীন’ বা সুস্পষ্ট বিজয়। ঠিক বিদ্রূপ কারবালার আত্মদানও ইসলামের বিজয়। উর্দু কবি মুহাম্মদ আলী জওহর তাই লিখেন,
‘ক্বাতলে হোসাইন আসল যে মরর্গে ইয়াজিদ হায় 
ইসলাম জিন্দা হোতা হায় হার কারবালাকে বাদ।’
অর্থাৎ হোসাইনের মৃত্যু আসলে ইয়াযিদেরই মৃত্যু। ইসলাম কারবালার পর পুনরুজ্জীবিত হয়েছে।
মুহররম তরবারির ওপর রক্তের বিজয়ের মাস। আশুরার চেতনা থেকেই সত্য বিজয় লাভ করে। অত্যাচারী পরাভূত হয়। নিন্দিত হয়, ধিকৃত হয়। আশুরার ইতিহাস চর্চার মাধ্যমেই এর খল চরিত্রগুলো চিহ্নিত হয়। বেরিয়ে আসে তদানিন্তন কারবালা যুদ্ধাপরাধীদের চেহারা ও সমর্থকেদের চেহারা। আশুরা আমাদেরকে শেখায় শক্তির বলে বিজয় লাভ করলেই প্রকৃত বিজয় হয় না। মানুষকে হত্যা করা যায়, কিন্তু তার আত্মাকে কেনা যায় না। কবি বলেন, ‘জেতা শুধু জেতা নয় হারা নয় হারা/সময় যে বলে দেয় বিজয়ী সে কারা।’
কারবালায় ইমাম হোসাইন সপরিবারে শহীদ হয়েও বিজয়ী। আর ইয়াযিদের বিশাল বাহিনী অসম যুদ্ধ করে বিজয়ী হলেও তারা অত্যাচারী যালিম।

হয়রত খাজা মাইনুদ্দিন চিশতি আজমিরি (র.)-এর হাতে এক কোটি ভারতীয় ইসলাম গ্রহণ করেছিল। তিনি বলেছিলেন,
‘শাহ আস্ত হোসাইন। বাদশা আস্ত হোসাইন।
দ্বীন আস্ত হোসাইন। দ্বীন পানাহ আস্ত হোসাইন
সার দাদ, ওয়া না দাদ দাস্ত দার দাস্ত ইয়াযিদ
হাক্কাকে বেনয়ে লা-ইলাহা আস্ত হোসাইন
মান বে গোলামে গোলামান হোসাইন।’
অর্থাৎ হোসাইন হচ্ছেন শাহ, হোসাইন হচ্ছেন বাদশা, হোসাইন দ্বীন, হোসাইন দ্বীনের মুক্তিদাতা, শির দিয়েছেনন কিন্তু ইয়াযিদের হাতে হাত মিলান নি। হোসাইন হচ্ছেন হক ও হকের মুক্তিদাতা, হোসাইন লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর ভিত্তি। আমি হোসাইনের গোলামদেরও গোলাম।
কারবালা এখনো ঘটে যাচ্ছে পৃথিবীতে। নবী বংশের খ্যাতনামা ইমাম ও ফিকাহবিদ ইমাম জাফর সাদেক (আ.) হাজার বছর আগেই বলেছিলেন ‘হার রোজ আশুরা, হার যামিন কারবালা’- প্রতিটি দিনই আশুরা আর প্রতিটি ময়দানই কারবালা। ক্রমবর্ধমান অত্যাচারের প্রেক্ষিতেই তিনি তা বলেছিলেন। তাঁর কথা এই শতাব্দীতেও তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলা ভাষাভাষি লেখক-সাহিত্যিকদের উচিত কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনার শোকগাথার সাথে আশুরার আন্দোলনের প্রকৃত তাৎপর্যকে উপলব্ধি করে যুগান্তকারী সাহিত্যকর্ম সৃষ্টি করা। যা বর্তমান সময় ও আগামী দিনের সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্বে সত্যকে বিজয়ী করার চেতনা সৃষ্টিকারী মাইল ফলক হিসেবে কাজ করবে। আশার কথা আমাদের দেশে ‘একুশের কবিতা’, ‘বিজয়ের কবিতা’, ‘স্বাধীনতার কবিতা’, ‘বৈশাখের পদাবলী’, ‘বৃষ্টির কবিতা’, ‘শীতের কবিতা’র পাশাপাশি যুক্ত হয়ে ‘সীরাতের কবিতা’ বা ‘মিলাদুন্নবী (সা.)-এর কবিতা’ও চর্চা হচ্ছে, পঠিত হচ্ছে। হচ্ছে নানা অনুষ্ঠানমালা। ঈদের কবিতা উৎসবও হচ্ছে বেশ কয়েক বছর যাবৎ। ইসলামের ইতিহাসের প্রাণপ্রদীপ নিহিত যে মহান ও শোকাবহ ঘটনার মধ্যে সেই আশুরা, কারবালা, মুহররমের কবিতার চর্চাও বাড়িয়ে দেয়া হোক ব্যাপকভাবে। এই কামনা করছি।