রবিবার, ৭ই জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

বই পরিচিতি

পোস্ট হয়েছে: জানুয়ারি ১৫, ২০১৮ 

বাংলায় ফারসি ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিকাশের ইতিহাস
রচনা : আবদুস সবুর খান
প্রকাশক : রিয়াজ খান
রোদেলা প্রকাশনী
রুমী মার্কেট (২য় তলা) ৬৮-৬৯, প্যারিদাস রোড
৩৫ বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০
প্রচ্ছদ : তারিক ফেরদৌস খান
প্রকাশকাল : আগস্ট ২০১৭
মুদ্রণ : আল কাদের অফসেট প্রিন্টার্স, ৫৭ ঋষিকেশ দাস লেন,
ঢাকা-১১০০
মূল্য : ৪০০ টাকা।

ড. আবদুস সবুর খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি একজন কথাশিল্পী, সুপরিচিত লেখক, গবেষক ও অনুবাদক। ১৯৯৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ও উর্দু বিভাগ থেকে ফারসি ভাষা ও সাহিত্যে এম এ প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করার পর ইরান সরকারের বৃত্তি নিয়ে তেহরানের শিক্ষক প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণ করেন এবং ২০০৩ সালে ইরানের ইমাম খোমেইনী (রহ.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং পরবর্তীকালে ২০০৬-৭ সালে তেহরানের আল্লামা তাবাতাবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ফারসি ভাষা ও সাহিত্যে গবেষণা কোর্স সম্পন্ন করেন। ফারসি ভাষা থেকে তিনি বেশ কিছু প্রবন্ধ নিবন্ধ অনুবাদ করেন। ইরানের বিখ্যাত কথাশিল্পী জালালে আলে আহমদের ‘নির্বাচিত ছোটগল্প’ এবং ফারসি ছোট গল্পের সংকলন ‘ইয়েকি বুদ ওয়া ইয়েকি নাবুদ’ এর বাংলা অনুবাদ ‘একদা একদিন’ এবং বাংলাদেশের জনপ্রিয় কথাশিল্পী হুমায়ুন আহমেদের ‘গৌরিপুর জংসন’-এর ফারসি অনুবাদ ‘ইস্তগাহে গৌরিপুর’ দক্ষতার সাথে অনুবাদ করেন। এছাড়া বাংলা একাডেমী থেকে ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর পিএইডি গবেষণার অভিসন্দর্ভ ‘আধুনিক ফারসি ছোটগল্প বিষয় বৈশিষ্ট্য, শিল্পরূপ, চিত্রিত জীবন ও সমাজ’। আর তাঁর আলোচ্য বই ‘বাংলায় ফারসি ভাষা ও সাহিত্য সংস্কৃতি বিকাশের ইতিহাস’ একটি তথ্যসমৃদ্ধ গবেষণা গ্রন্থ। এখানে তিনি বাংলা বলতে শুধু স্বাধীন বাংলাদেশকেই বোঝান নি; বরং সমগ্র বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলকে বুঝিয়েছেন। বাংলা বলতে প্রাচীন ভারতের পূর্বাঞ্চল, তুর্ক-আফগান শাহী বাংলা, স্বাধীন সুলতানী বাংলা, মোগল সুবে বাংলা, ব্রিটিশ বঙ্গ, পাকিস্তান শাসনামলে বাংলা ও সর্বশেষে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সীমানা সব সময় এক রকম ছিল না। এক সময় বাংলাদেশকে গৌড়, পুণ্ড্র, রাঢ়, সমতট, হরিকেল এই পাঁচভাগে বিভক্ত করা হতো। শাসনামল ও সীমানা পরিবর্তন হলেও পারস্যের সাথে বাংলাদেশের এবং ফারসি ভাষার সাথে বাংলা ভাষার সম্পর্ক সব সময়ই ছিল। বাংলা ও ফারসি উভয় ভাষাই প্রাচীন ভাষা। উভয় ভাষারই রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য। ভাষার ইতিহাস ও ভাষাতাত্ত্বিকদের আলোচনা পর্যালোচনায় উঠে আসে এ ব্যাপারে নানাবিধ তথ্য। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সাথে ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের সম্পর্কের কথা বহু স্থানে বহু বার উচ্চারিত এবং সর্বজনবিদিত। বাংলা ভাষায় সাড়ে সাত হাজার ফারসি শব্দ সরাসরি আত্মস্থ হয়েছে যা আজ বাংলা ভাষার শব্দ হিসেবে চিহ্নিত। এছাড়া অনেক শব্দ এসেছে পরিবর্তিত হয়ে। বাংলার আঞ্চলিক শব্দমালায় অগণিত ফারসি শব্দের স্পর্শ লেগে আছে। বাংলাদেশে ইসলাম এসেছে অলি-আউলিয়াদের মাধ্যমে। যাঁদের ভাষা ছিল ফারসি। তাসাউফের অধিকাংশ মৌলিক গ্রন্থ ফারসি ভাষায় রচিত। এছাড়া রাজভাষা হিসেবে ফারসি বজায় ছিল পলাশীর প্রান্তরে নবাবের পরাজয়ের পরও অনেক বছর। ইংরেজরাও ইংরেজি হুট করে চাপিয়ে দিতে পারে নি। কারণ, রাজকার্যের ভূমি সংক্রান্ত, খাজনা সংক্রান্ত দলিল-দস্তাবেজও ছিল ফারসিতে। মোগল শাসকদের ইতিহাসও আমরা ফারসি ভাষাতে পাই। কাজেই ফারসি ভাষা ইরানের ভাষা হলেও ঐতিহাসিক ভাবে ও ধর্মীয় কারণে এ ভাষা ও সংস্কৃতি বাংলা ভাষা ও সাহিত্য-সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যায়।
ফারসি ভাষা ও সাহিত্য এর মূল ভূখ- পারস্য বা ইরানে যেমন যুগে যুগে বিকশিত হয়েছে ঠিক তেমনি ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় কারণে সুবে বাংলা, সুলতানী বাংলা কিংবা বর্তমান সময়ের বাংলাদেশেও এর চর্চা ও বিকাশের ধারা অব্যাহত রয়েছে। ইরানের সাথে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সম্পর্ক অতীতেও ছিল বর্তমানেও আছে এবং তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। কেননা, ইরানের ইসলামি বিপ্লবের পর সেই সম্বন্ধ আরো জোরদার হয়েছে।
লেখক, গবেষক, কথাশিল্পী, অনুবাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান, অধ্যাপক ড. আবদুস সবুর খানের উক্ত গবেষণা গ্রন্থটিতে বাংলাদেশে ফারসিচর্চা ও সংস্কৃতি বিকাশের ইতিহাসের চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সুদূর অতীত থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত সকল কর্মকা- প্রচেষ্টাসমূহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ফারসিচর্চা, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নানা কর্মসূচি, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিকাশের নানা কর্মশালা, ক্লাস-সেমিনার ইত্যাদির কথাও তুলে ধরা হয়েছে। তবে বইটিতে মাদ্রাসাসমূহের ফারসিচর্চা প্রসঙ্গেও বলা হয়েছে।
বইটি বাংলা ও ফারসি সাহিত্য গবেষকদের, ফারসি সাহিত্যানুরাগীদের কাজে লাগবে। ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়ক গ্রন্থ হিসেবেও পাঠযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বইটির প্রচ্ছদ চমৎকার এবং মুদ্রণও ভালো। আমরা উক্ত গ্রন্থটির ব্যাপক পঠন ও পর্যালোচনার আহ্বান জানাচ্ছি।

□ আমিন আল আসাদ