বৃহস্পতিবার, ৪ঠা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২০শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

দেশপ্রেম ও আহলে বাইতের অনুসরণ ইরানি জাতির দুই অনন্য বৈশিষ্ট্য

পোস্ট হয়েছে: মে ১৬, ২০২৪ 

news-image

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ইরানের গত প্রায় দেড় হাজার বছরের ইতিহাসে এদেশে এমন কিছু ক্ষণজন্মা পুরুষের আবির্ভাব হয়েছে যারা তাদের অনন্যসাধারণ প্রতিভা ও সক্ষমতা দিয়ে মানবজাতির জন্য কিছু শৈল্পিক ও চিন্তাশীল কর্ম রেখে গেছেন।

মহাকাব্য শাহনামার রচয়িতা আবুলকাসেম ফেরদৌসির স্মরণে তেহরানে আয়োজিত এক সম্মেলনে পাঠানো বার্তায় সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসি এ মন্তব্য করেন। ইরানের সংস্কৃতি ও ইসলামি দিকনির্দেশনা মন্ত্রী মোহাম্মাদ মাহদি ইসমাইলি সম্মেলনে প্রেসিডেন্টের বার্তাটি পড়ে শোনান।

বার্তায় প্রেসিডেন্ট গৌরবোজ্জ্বল ইরানি-ইসলামি সভ্যতার পূর্ণতা প্রাপ্তিতে এই মহাকবির অনন্য ভূমিকার কথা স্মরণ করেন।

মহাকবি ফেরদৌসির স্মরণে আয়োজিত সম্মেলনে ইরানের প্রেসিডেন্টের মূল বার্তাটি পার্সটুডের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো:

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

‘শুরু করছি প্রাণ ও প্রজ্ঞার প্রভুর নামে’

‘কল্পনা যার নামের সীমা অতিক্রম করতে পারে না’

ইসলামি ইরানের সভ্যতা ও সংস্কৃতি গৌরবোজ্জ্বল ইসলামি সভ্যতার বটবৃক্ষের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। এটি এমন এক সভ্যতা যা পশ্চিমা মধ্যযুগের অন্ধকার যুগে খোদাপ্রেমী মানুষের প্রকৃতিতে চিন্তার ছাপ ফেলেছিল এবং মহান আল্লাহর পাঠানো সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূলের বার্তার আধ্যাত্মিকতার চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে তৌহিদি শিক্ষার আলোকে মানবতার ভবিষ্যতকে আলোকিত করেছিল।

প্রাচ্যের এই প্রাচীন সভ্যতার কেন্দ্রস্থলে ইরানি সংস্কৃতি কেবল মুসলিম বিশ্বকেই নয়, বরং একটি কেন্দ্রীয় বলয় হিসেবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের গণসচেতনতা সৃষ্টির সংযোগ বিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। এমনকি বর্তমান সময়ে বস্তুবাদী চিন্তাধারা যখন গোটা বিশ্বকে গ্রাস করে ফেলেছে তখনও এটি সত্য জ্ঞানের আদর্শ ধারক এবং ন্যায় ও প্রজ্ঞার বাহক হতে সক্ষম হয়েছে।

এই দীর্ঘ যাত্রায়, ফার্সি ভাষা আল্লাহর কালামের পর মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে জ্ঞান, ভক্তি ও আহলে বাইতের (আলাইহিমুস সালাম) প্রতি অনুরাগের ভাষায় পরিণত হয়েছে। ইরানের গত প্রায় দেড় হাজার বছরের ইতিহাসে এদেশে এমন কিছু ক্ষণজন্মা পুরুষের আবির্ভাব হয়েছে যারা তাদের অনন্যসাধারণ প্রতিভা ও সক্ষমতা দিয়ে মানবজাতির জন্য কিছু শৈল্পিক ও চিন্তাশীল কর্ম রেখে গেছেন।

এই ভাষার ইতিহাসে ও ইরানি- ইসলামি সভ্যতার পূর্ণতা প্রাপ্তিতে একটি নামের অনন্যসাধারণ ভূমিকা রয়েছে যে নামটি মহাকবী ফেরদৌসি ছাড়া আর কারো নয়। তুস শহরের এই প্রজ্ঞাবান কবির শাহনামা গ্রন্থ এদেশের মানুষের দেশপ্রেমের সঙ্গে একাকার হয়ে স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, বীরত্বপূর্ণ অধ্যবসায় এবং প্রজ্ঞার প্রতীক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এদেশের মানুষ স্বার্থের পেছনে না ছুটে সব সময় সত্যের পথে অটল-অবিচল থেকেছে এবং তাদের ভূখণ্ড থেকে যেকোনো মূল্যে আগ্রাসী শক্তিকে বিতাড়িত করেছে। তারা ঐশী প্রতিশ্রুতির প্রতি দৃঢ়বিশ্বাস রেখে বীর পালোয়ান রুস্তমের মতো সকল অপশক্তিকে পরাভূত করেছে।

ফেরদৌসিকে শুধুমাত্র একজন কবি হিসেবে না দেখে বরং ইসলামি ইরানের সংস্কৃতির সারমর্ম ও সারবত্তা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। তিনি দেশপ্রেম ও আহলে বাইতের অনুসরণকে ইরানি জাতির দুই অনন্য বৈশিষ্ট্যে পরিণত করেন। মহাকবি ফেরদৌসি তার শাহনামা গ্রন্থে শৃঙ্খলার একটি সুউচ্চ প্রাসাদ ও মহাকাব্যের একটি বিশাল দুর্গ নির্মাণ করেন, যার ভিত্তি ছিল ফার্সি ভাষা এবং যার উচ্চতা ছিল হযরত আলী (আ.)-এ প্রতি অনুরাগ ও ভালোবাসা।

এখন, এই মনীষীর চিন্তা ও শিল্পকে সম্মান ও স্বীকৃতি দেয়ার প্রচেষ্টা, আজকের সমাজ, বিশেষ করে ইসলামি ইরানের ভবিষ্যত-নির্মাতা তরুণ প্রজন্মের কাছে অতি গুরুত্বের বিষয়। এ কারণে বর্তমান সরকার তার সর্বশক্তি দিয়ে বৈশ্বিক অঙ্গনে মহাকবি আবুলকাসেম ফেরদৌসির মতো একজন মহান ব্যক্তিত্বের কর্মের পরিধি ছড়িয়ে দেয়ার জন্য একটি বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

পরিশেষে এই সম্মেলনের আয়োজনে যারা নানাভাবে ভূমিকা রেখেছেন তাদের প্রত্যেকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এই মহাকবিকে স্মরণের দিনটিকে ফার্সি ভাষাকে সমুন্নত রাখার দিন হিসেবে উদযাপন করা হয়। এ কারণে আমি ইরানের শিল্প ও সংস্কৃতিপ্রেমী জনগণের পাশাপাশি ফার্সি ভাষাভাষী দেশগুলোর নাগরিক এবং বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ফেরদৌসি প্রেমীদের অভিনন্দন জানাছি। পাশাপাশি আরও বেশি সফলতা কামনা করছি তাদের জন্য যারা তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা দিয়ে ফারসি ভাষা ও সংস্কৃতির সেবা করে যাচ্ছেন।

সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসি

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট।

পার্সটুডে/