সোমবার, ১৫ই জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩১শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

ইরানোফোবিয়ার বিরুদ্ধে পর্যটন যেভাবে কার্যকর হাতিয়ার

পোস্ট হয়েছে: মে ১১, ২০২২ 

news-image

কিছু পশ্চিমা সরকার দীর্ঘদিন ধরে যে ইরানোফোবিয়া (ইরান ভীতি) ছড়িয়ে দিয়েছে তার বিরুদ্বে কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে পর্যটন শিল্প। এমন তথ্য জানিয়েছেন ইসলামি বিশ্বের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার (আইসিইএসসিও) একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ইরানের পর্যটন এবং আতিথেয়তা শিল্পের অবদানকে ইরানবিরোধী মনোভাব বা ইরানোফোবিয়াকে বানচাল করার একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে দেখা গেছে।  বৃহস্পতিবার আইসিইএসসিও কর্মকর্তা আবদোলকারিম সাদেকদুস্ত বলেন, বিদেশি পর্যটকরা যখন ছুটির দিনগুলোতে অবকাশযাপনে ইরানে আসেন, তখন তারা দেশের আসল চেহারা অনুভব করেন। তাই ইরানোফোবিয়া এবং ইসলামোফোবিয়া অনুভূতিকে নস্যাৎ করতে পর্যটন একটি বড় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।ইরানের আইসিইএসসিও দপ্তরের সভাপতিত্বকারী এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ইরানের সঠিক পরিচয় তুলে ধরার মাধ্যমে আমরা ইরানবিরোধী প্রচার-প্রচারণার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারি।বিষয়টি সামনে রেখে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সহ ১৫টি দেশের স্বল্প পরিচিত গন্তব্যগুলো তুলে ধরতে ইসলামিক ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম এক্সিবিশন (আইডব্লিউটিই) এর ১ম পর্বের আয়োজন করতে যাচ্ছে তেহরান। রাজধানীর শাহ-ই আফতাব আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্রে ৭ থেকে ১০ জুন এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। মেলার প্রধান প্রধান বিষয়, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ, ইকোট্যুরিজম সেন্টার, মেডিকেল ট্যুরিজম এবং তীর্থযাত্রা সম্পর্কে আলোকপাত করা।কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই ধরনের ‘মিডিয়া যুদ্ধের’ কারণে ইরান এখনও অনেক সম্ভাব্য ভ্রমণকারীদের কাছে ‘অজানা’। এজন্য ইরানের পর্যটন কিছু চ্যালেঞ্জের সাথে লড়াই করছে। সম্ভাব্য ভ্রমণকারীদের ইরান সম্পর্কে ভয় দেখানোর লক্ষ্যে পশ্চিমারা ‘মিডিয়া প্রপাগান্ডা’ চালাচ্ছে। এই মিথ্যা প্রচারণা মোকাবেলা করাই ইরানের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।মিডিয়া প্রপাগান্ডা পশ্চিমা ভ্রমণকারীদের ইরান ভ্রমণে দীর্ঘকাল থেকেই প্রভাবিত করে আসছে। কিন্তু ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান গত কয়েক বছর ধরে পর্যটনকে ব্যবহার করার জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সীমাহীন বিরোধিতায় ক্ষতিগ্রস্ত আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকে উন্নীত করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।ইরানের এই প্রচেষ্টার ফলে এখন বিদেশি একজন ব্যাকপ্যাকার ইরানের অত্যাশ্চর্য প্রাকৃতিক দৃশ্য, অসংখ্য বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান উপভোগ করার স্বপ্ন দেখেন। সর্বোপরি অতিথিপরায়ণ মানুষের কারণে ছুটির দিনে অবকাশ যাপনের সেরা গন্তব্যে পরিণত হওয়ার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে দেশটির।ইরানকে প্রায়শই ‘ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ’ দেশ হিসেবে চিত্রিত করা হয়। দেশটি ভ্রমণের অসাধারণ অভিজ্ঞতা আছে এমন পর্যটকরাই যার প্রশংসা করে থাকেন। বিশেষ করে একক নারী ভ্রমণকারী, পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসা এবং নিঃসঙ্গ সময় কাটাতে আসা ভ্রমণকারীরা ইরানকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ’ পর্যটন গন্তব্য হিসেবে অভিহিত করে৷‘আমার পরামর্শ, আপনি খবরে যা শুনেছেন তা বিশ্বাস করবেন না। ইরান সম্পর্কে খোঁজখবর নিন। স্থানীয়দের সাথে কথা বলুন। অতঃপর আপনার নিজের সিদ্ধান্তে আসুন। খোলা মন নিয়ে ইরানে আসুন। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি, আপনি ইরানে অনেক অমায়িক বন্ধু তৈরি করতে পারবেন।’ পোলিশ ভ্রমণকারী আন্না কারস্টেন ২০২০ সালে তার এক ভ্রমণকাহিনীতে এভাবেই কথাগুলো লিখেছেন।“আমার কাছে, একবার বা দুবার অস্বস্তিকর হওয়ার অর্থ এই নয় যে জায়গাটি বিপজ্জনক। আমি কখনও শারীরিকভাবে হুমকি, অনিরাপদ বা ঝুঁকি বোধ করিনি। এমনকি যখন আমি ইরানের রাস্তায় ঘুরেছি তখন নিজেকে অনিরাপদ মনে করিনি। আমি নিউইয়র্ক শহর ঘুরে বেড়ানোর চেয়ে ইরানে বেশি নিরাপদ বোধ করি। এমনকি ইরানে ট্যাপের পানিও নিরাপদ ছিল!’’নেদারল্যান্ডসের একজন সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানী এলিস ভিন। তিনি ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রাচীন সিল্ক রোড ধরে পঞ্চাশের অধিক দেশ ভ্রমণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইরান সফরের পরে আমি নিজেকে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটি করেছি তা হলো- একজন নারী হিসেবে ইরান ভ্রমণ আমার জন্য নিরাপদ কিনা। আমার সংক্ষিপ্ত উত্তর হবে, হ্যাঁ এবং আমি ইরানকে ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে বেছে নিতে অন্যদেরও পরামর্শ দেব।‘ইরান হল মধ্যপ্রাচ্যের (পশ্চিম এশিয়া) সবচেয়ে নিরাপদ দেশগুলোর অন্যতম। আমার ভ্রমণের ইতিহাসে আমার দেখা বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে ইরানিরা অনন্য। দেশটির জনগণ মহান আতিথেয়তার জন্য বিখ্যাত।যারা ইরানি সংস্কৃতি সম্পর্কে জানেন তাদের কাছে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ইরানিরা ঐতিহ্যগতভাবেই উদার অতিথিপরায়ণ। তারা অতিথিদের সেরাটা উজাড় করে দেয়। ঐতিহ্যবাহী ইরানি সংস্কৃতিতে অতিথিদের মূল্যবান রত্নগুলোর মতো লালন করা হয়।চিকিৎসা পর্যটনের ক্ষেত্রে দেশীয় অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, দেশি-বিদেশি উভয় রোগীদের জন্যই ইরান একটি ভালো পর্যটন গন্তব্য। কারণ তাদের সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্পন্ন চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয় এবং দেশটি চিকিৎসা পর্যটন থেকে যথেষ্ট বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে।ইরানে মেডিকেল পর্যটনের আকর্ষণীয় দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে, বিশ্বস্ত সার্জন এবং চিকিৎসকদের উপস্থিতি, অত্যাধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তি, উচ্চ প্রযুক্তির ওষুধ এবং বিভিন্ন বিশেষীকরণ, অতি সাশ্রয়ী মূল্যের পদ্ধতি এবং সর্বপোরি এর অতিথিপরায়ণ ব্যক্তিরা। সূত্র: তেহরান টাইমস।